বিদেশে উচ্চশিক্ষা : বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি পেতে প্রয়োজনীয় তথ্য

0
207
বিদেশে উচ্চশিক্ষা উচ্চশিক্ষায় বৃত্তি প্রদানকারী দেশ ও বৃত্তির খোঁজ উচ্চশিক্ষায় বৃত্তি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
বিদেশে উচ্চশিক্ষা : বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি পেতে প্রয়োজনীয় তথ্য

বিদেশে উচ্চশিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাদের সেই পরিমাণ অর্থ নেই তারা এই বৃত্তির সাহায্যে উচ্চশিক্ষা অর্জন করে থাকে। আজকে আমরা জানবো বিদেশে উচ্চশিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি পেতে যে সব প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে হবে। যেমন, উচ্চশিক্ষায় বৃত্তি প্রদানকারী দেশ কোনগুলো, কোথায় বৃত্তির খোঁজ পাব, উচ্চশিক্ষার জন্য কি কি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগবে এই সব সম্পর্কে আজকে আলোচনা করবো। চলুন শুরু করা যাক-

বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি পেতে প্রয়োজনীয় তথ্য

উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি পেতে হলে আপনাকে আগে থেকেই অনেক প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে হবে। কোন দেশ উচ্চশিক্ষায় বৃত্তি প্রদান করে থাকে। কোথায় উচ্চশিক্ষার জন্য বৃত্তির খোঁজ পাবেন ইত্যাদি।

আমাদের মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা সপ্ন দেখে বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহন করবে। তাদের সপ্ন হচ্ছে বিদেশ থেকে পড়া শুনা করে দেশের জন্য কল্যান মূলক কিছু করা। কিন্তু অনেক শিক্ষার্থী পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে বিদেশে গিয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে পারে না। তাই বিভিন্ন দেশ এর কিছু বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় বৃত্তি চালু করে।

যাতে করে আগ্রহী শিক্ষার্থী তাদের লক্ষ অর্জন করতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে অনেক শিক্ষার্থী বৃত্তি বা স্কলারশিপের আবেদনের জন্য সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারনে তাদের অনেক দিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ করতে পারে না। তাদের যে লক্ষ্য সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে বাধাপ্রাপ্ত হয় আর সেই লক্ষ্যকে বাস্তবায়ন করতে পারে না।

তাই বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সব বিষয় সম্পর্কে সু স্পষ্ট ধারনা থাকা অত্যন্ত জরুরী। এ ক্ষেত্রে বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে যাওয়ার অনেক আগে থেকেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য পুর্ব প্রস্তুতি দরকার। তাই বিদেশে উচ্চশিক্ষা বা বিশ্ব বিদ্যালয়ে বৃত্তি বা স্কলারশিপ পেতে যেসব বিষয় জানা জরুরী তা নিম্নে সল্প পরিসরে আলোচনা করা হল-

উচ্চশিক্ষায় বৃত্তি প্রদানকারী দেশ

বিদেশে উচ্চশিক্ষা এর জন্য বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে পছন্দের তালিকায় আছে যে পাচঁটি দেশ তা হল-

১। যুক্তরাষ্ট্র
২। মালয়েশীয়া
৩। অস্ট্রেলিয়া
৪। জার্মানি
৫। কানাডা

এছাড়া বিশ্বের অনেক দেশ আগ্রহী ও মেধাবী শিক্ষার্থীর জন্য বৃত্তি প্রদান করে থাকে। যেমন, হাঙ্গেরী, চায়না, জাপান ও চীন। এই সব দেশের প্রকাশিত বৃত্তিতে আবেদন করা হয় বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রনালয় এর মাধ্যমে।

স্কলারশিপ নিয়ে বাইরের দেশে উচ্চশিক্ষা নিতে আগ্রহী শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে বাংলাদেশ এ। কিন্তু দক্ষিন এশিয়ার দেশ গুলোর থেকে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীর বিশ্ব বিদ্যালয়ে বৃত্তির জন্য আবেদনের সংখা খুবই কম।

এর একটি বড় কারন হল আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা না থাকা। আর বিদেশে উচ্চশিক্ষা এই আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচ্ছ ধারনা থাকলে কোন এজেন্সির সাহায্য ছাড়াই আপনি আপনার যোগ্যতা দিয়ে নিজের চেষ্টায় একটি ভাল বৃত্তি পেতে পারেন।

বিদেশে উচ্চশিক্ষায় বৃত্তির খোঁজ

বিভিন্ন দেশের বৃত্তির জন্য বিভিন্ন দেশ তাদের মত করে যোগ্যতা নির্ধারণ করে থাকে। তাই আপনাকে আগে থেকেই ঠিক করে নিতে হবে কোন দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালইয়ে বৃত্তির জন্য আপনি আবেদন করতে চান?  এ ক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করবে বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েব সাইট। নিচে কয়েকটি দেশের ওয়েবসাইট দেয়া হলো-

যুক্তরাজ্য- http://www.gov.uk/browse/visa-immigration/student-visa

অস্ট্রেলিয়া- http://studyinaustralia.gov.au

কানাডা- www.cic.gc.ca/english/information/applocation/student.asp

জার্মানি-www.daad.org.uk/en/12703/index.html

এছাড়াও আপনারা নানা দেশের দূতাবাস গুলোর ওয়েবসাইটে গেলে বিভিন্ন রকমের বিদেশে উচ্চশিক্ষা এর বৃত্তি তথ্য পেতে পারেন। এখানে প্রতি বছরের বৃত্তি তথ্য দেয়া থাকে। আপনি চাইলে সরাসরি এই সব দেশের দূতাবাসে যোগাযোগ করেও বৃত্তি তথ্য নিতে পারেন। এছাড়াও আপনি এই বৃত্তি তথ্যের বিশাল সংগ্রহ পাবেন শিক্ষামন্ত্রনালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ওয়েবসাইটে।

বিদেশে উচ্চশিক্ষায় বৃত্তির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

প্রত্যেকটি বৃত্তির জন্য আবেদনের নির্দিষ্ট সময় সীমা থাকে। এর মধ্যে আপনাকে বৃত্তির সকল কাগজপাতি দিয়ে বৃত্তির জন্য আবেদন করতে হবে। সময় সীমা পার হয়ে গেলে আবেদন করা আর যাবে না। এই জন্য আগে থেকেই সকল কাগজ পত্র প্রস্তুত করে রাখতে হবে। এতে আবেদন করা সহজ হয়ে যায়। যেমন-

১। মেয়াদ সম্পন্ন পাসপোর্ট
২। পরীক্ষার ট্রান্সক্রিপ্ট ও সার্টিফিকেট
৩। ভাষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট

অনেক দেশে এইসব কাগজ পত্রের উল্লেখ করে তারা বৃত্তির প্রকাশ করে থাকে।

গুরুত্বপুর্ণ বিষয়গুলোঃ পাচটি বিষয় সম্পর্কে ভালো ভাবে জানা থাকতে হবে। এগুলো জানা থাকলে বৃত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সহায়তা করে। চলুন জেনে নেই

১। উচ্চশিক্ষায় ভাষা দক্ষতা

যে দেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যান না কেন সেই দেশের ভাষা ভাল ভাবে জানা থাকলে বৃত্তি পাওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যাবে। এছাড়া TOEFL,IELTS,PTE এই সব পরীক্ষাতে ভালো একটা রেজাল্ট পেতে হয়। এই সব পরীক্ষার রেজাল্ট বৃত্তি পাওয়ার সম্ভবনা বাড়িয়ে দেয়। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যেমন, জার্মানি বা ফ্রান্সের মত দেশ এ ঐ দেশের ভাষা সংশ্লিষ্ট পরীক্ষায় ভাল স্কোর থাকতে হবে।

২। আগের পরীক্ষায় ভালো জিপিএ

বাইরের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় এর বৃত্তিগুলো শুধু ক্লাসের রোল নম্বর এক রাই পায় না। এটা একটা ভুল ধারনা। তোমাদের সর্বোচ্চ মার্ক পেতে হবে না। সব বিষয়ে মোটামুটি ভাল একটা সিজিপিএ থাকলে বৃত্তি পাওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে।

৩। প্রকাশনা ও এক্সট্রা কারিকুলার এক্টভিটিস

এর আগে যারা বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বৃত্তি পেয়েছেন তারা কিন্তু এই বিষয়ের উপর খুব ভাল একটা জোর দিয়েছেন। ভালো কোন জার্নালে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিজের লেখা ছাপানো বা পড়া শুনার পাশাপাশি কোন গঠন মূলক কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এই সব কাজ গুলো বিদেশী বিশ্ব বিদ্যালয়গুলো খুব গুরুত্ব সহকারে দেখে থাকে।

এই সব কাজ না করে থাকলে আজকে থেকেই শুরু করে দিন। কেননা এসব বিষয় আপনার মধ্যে থাকলে উচ্চশিক্ষা এর জন্য বিদেশে বিশ্ব বিদ্যালয়ের বৃত্তি পাওয়ার সম্ভবনা অনেক গুন বেড়ে যাবে। আপনি যে বিষয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষা এর জন্য আবেদন করবেন সে বিষয় সংক্রান্ত আপনার কোন কাজের অভিজ্ঞতা কিংবা পাবলিকেশনস আপনার বৃত্তি পাওয়ার সম্ভবনা বাড়িয়ে দেবে।

৪। স্টেট্মেন্ট অব পারপাস

বিদেশে বৃত্তি পাওয়ার জন্য বিশ্ব বিদ্যালয়গুলোতে একটা চিঠি লিখতে হয়। কেন আপনি এই বিশ্ব বিদ্যালয় এ পড়তে চান? এটাই স্টেটমেন্ট অব পারপাস। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ। যারা ইতমধ্যে বৃত্তি পেয়েছেন তারা এই লেটার লেখার বিষয়ে যথেষ্ট সৃজনশীল হবার পরামর্শ দিয়েছেন।

খুবই চিন্তা ভাবনা করে যথাযথ ভাবে আপনাকে ঐ বিশ্ব বিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নিবেন কি জন্য তা লিখতে হবে। এটা খুব ভাল একটা প্রভাব ফেলবে আপনার বৃত্তি পাওয়ার জন্য। বিশ্ব বিদ্যালয় গুলো থেকে এই লেটার লেখার কিছু স্যাম্পল ও দিয়ে থাকে।

সেখান থেকে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে খুব সৃজনশীল ভাবে লেটার লিখতে হবে। হুবহু সেই স্যাম্পল লিখা যাবে না। এতে তোমার সৃজনশীলতা তাদের কাছে খুব কম বলে মনে হবে আর তোমার বৃত্তি পাওয়ার সম্ভবনা কমে যাবে। স্টেটমেন্ট অব পারপাস এ তোমার দীর্ঘ মেয়াদি ও সল্প মেয়াদি পরিকল্পনা যক্ত করে দিলে খুব ভাল হয়।

৫।  রিকমেন্ডেশন লেটার

বিদেশের বিশ্ব বিদ্যালয় গুলো ভর্তির জন্য পুর্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এর কাছ থেকে রিকমেন্ডেশন লেটার চাওয়া হয়। এই লেটার লেখার ব্যাপারেও আপনাকে আপনার শিক্ষককে সময় দিয়ে সুন্দর করে লিখে নিন। কেননা এই লেটারটির ভাষা যদি আর আট দশটা আবেদনকারীর মত হয় তাহলে বৃত্তির সম্ভবনা অনেক কমে যেতে পারে। তাই আপনি যে শিক্ষকের তত্তাবধানে পড়েছেন সেই শিক্ষককে যথেষ্ট সময় দিন যাতে খুব ভালো ভাবে ভাষা গত দিক লক্ষ্য রেখে লেটারটি লিখতে পারে।

৬। পরিকল্পনা ও গবেষণা করা

আপনার মত হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক উচ্চশিক্ষায় বৃত্তির জন্য আবেদন করছে। আবেদনের সময় প্রতিটি ধাপে নিজের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগাতে হবে। যার সৃজনশীলতা যত বেশি হবে তার বৃত্তি পাওয়ার সম্ভবনা তত বেড়ে যাবে।

আপনি যত ভালভাবে নিজের কাংক্ষিত বিশ্ব বিদ্যালয়, আপনার বিষয়ের ফান্ডিং এর পরিমান ও যারা পড়াচ্ছেন এই সব বিষয় ভালো ভাবে জানবেন। এতে করে ভালো ভাবেই নির্ভুল আকারে বৃত্তির আবেদন করতে খুব সহায়তা করবে।

এজন্য আগে থেকেই সময় নিয়ে ভালভাবে বুঝে গুছিয়ে পরিকল্পনা করুন। যে বিশ্ব বিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা নিতে চান ও বৃত্তি পেতে চান সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনার আগে যারা বৃত্তি পেয়েছে তাদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা জেনে নিন। তাদের সাথে পরামর্শ করুন। তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আপনি সেই কাংক্ষিত বিশ্ব বিদ্যালয়ের বৃত্তির জন্য আবেদন করুন।

বৃত্তির আবেদন থেকে শুরু করে ভর্তি প্রক্রিয়ায় যেতে সময় লাগে। এই সময়টা খুবই ক্লান্তিকর ও লম্বা একটি সময় পর্যন্ত হয়ে থাকে। তাই ধৈর্য ধারন করতে হবে। তবে সময়মত সকল প্রক্রিয়া সম্পাদন করার মাধ্যমে আপনিও পেতে পারেন আপনার কাংক্ষিত বিশ্ব বিদ্যালয়ে বনা মুল্যে পড়ার সুযোগ।

আশা করি আপনারা আজকের আলোচনা থেকে উচ্চশিক্ষায় বৃত্তি প্রদানকারী দেশ ও বৃত্তির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও বৃত্তির খোঁজ কোথায় পাবেন তা বুঝতে পেরেছেন। বিদেশে উচ্চশিক্ষা অর্জনে এই সব তথ্য আপনাকে আগে থেকেই জানতে হবে এবং সেভাবে কাজ করতে হবে। ধন্যবাদ