বিদেশে উচ্চশিক্ষা জেনে নিন প্রস্তুতিতে করণীয়

0
235
বিদেশে উচ্চশিক্ষা জেনে নিন প্রস্তুতিতে করণীয়
বিদেশে উচ্চশিক্ষা জেনে নিন প্রস্তুতিতে করণীয়

বিদেশে উচ্চশিক্ষা এর জন্য যে সমস্ত বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি তা নিচে আলোচনা করা হলঃ

আমরা যারা বিদেশে উচ্চশিক্ষা এর জন্য যেতে চাই তাদের মনে অনেক রকমের প্রশ্ন আসে। এই প্রশ্নের যেন কোন শেষ নেই। যেমন এটা তো করলাম এখন কি করবো? আচ্ছা এটা কিভাবে করতে হবে? উফ কি যে করি। স্কলারশিপ কিভাবে নিবো? কিংবা কি কি দরকার হয় স্কলারশিপ এর জন্য?

আজকে আমি আপনাদের বললো বিদেশে স্কলারশিপ এর জন্য কি কি প্রয়োজন হয়? আর স্কলারশিপ পেতে কি কি কার্য সম্পাদন করতে হবে। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে আজকের আলোচনা শুরু করা যাক-

এই আলোচনা গুলো আমি করছি মুলত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে এই সকল বিষয় প্রায় একই হয়ে থাকে। ধরছি আপনি এইচএসসি বা ডিপ্লোমা শেষ করেছেন বা খুব তারাতারি শেষ করতে যাচ্ছেন। আপনাকে উচ্চশিক্ষা নিতে হলে এই ধাপ আগে পার হতে হবে। এখন ধাপে ধাপে সব বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে। উচ্চশিক্ষা গ্রহনের ক্ষেত্রে আপনাকে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।

১। SSC Marksheet

আবেদন করতে যে সকল বিষয়ের বা ডকুমেন্টের প্রয়োজন হয় তার মধ্যে এসএসসি মার্কশিট অন্যতম। এসএসসি মার্কশিট আপনাকে পরিক্ষার পর দেয়া হয়। এতে উল্লেখ থাকে আপনার প্রত্যেক বিষয়ের উপর কি পরিমান নম্বর পেয়েছে। এটা বর্তমানে গ্রেড আকারে দেয়া থাকে। স্কলারশিপ এর জন্য আপনাকে আপনার এসএসসি মার্কশিটে গ্রেড পয়েন্ট যত বেশি থাকবে  স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে তত আপনাকে সাহায্য করবে।

তবে অনলাইন মার্কশিট দিয়ে আবেদন করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা এর জন্য আপনাকে অবশ্যই মূল মার্কশিট টি যোগার করতে হবে।

২। SSC Certificate

এসএসসি মার্কশিটের সাথে আপনাকে এসএসসি এর সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে। এক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা এর জন্য আপনাকে আপনার অরিজিনাল সার্টিফিকেট নিতে হবে। নকল কোন কিছুই গ্রহনযোগ্য নয়।

৩। HSC Marksheet

এর পরে আপনার প্রয়োজন হবে এইচএসসি এর মার্কশিট। আর যারা ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ার কোর্স সম্পন্ন করেছেন তাদের উচ্চশিক্ষা এর জন্য ডিপ্লোমার চূড়ান্ত মার্কশিট তথা ৮ম পর্বের মার্কশিট টা হলে খুব ভাল হবে। তবে বোর্ড পরিক্ষার অন্য যেকোন মার্কশিট হলেও আবেদন করা যাবে।

৪। HSC Certificate

এসএসসি সার্টিফিকেটের মত আপনার প্রয়োজন হবে এইচএসসি এর সার্টিফিকেট। আর যারা ডিপ্লোমা করেছেন তাদের জন্য ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং এর সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে। তবে ডিপ্লোমার স্টুডেন্ট দের যদি এমন হয় যে তারা ডিপ্লোমা শেষ করেছে কিন্তু সার্টিফিকেট পায় নি তাহলে আপনার সেক্ষেত্রে আপনার পলিটেকনিক্যাল ক্লিয়ারেন্স এর প্রয়োজন পরবে।

যারা ডিপ্লোমাতে পড়েছেন তাদের নতুন করে ক্লিয়ারেন্স সম্পর্কে বলার দরকার হবে না। তবে ক্লিয়ারেন্স কপি অবশ্যই মূল কপি হতে হবে। আর মার্কশিটের ক্ষেত্রে যদি আপনি মুল কপি সংগ্রহ করতে না পারেন তাহলে ফটোকপি দিয়ে কাজ হবে কিন্তু সাথে ছোট্ট একটি কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনাকে আপনার মার্কশিটটা নোটারি বা সত্যায়িত করতে হবে।

৫। পাসপোর্ট

আবেদনের জন্য আপনার পাসপোর্ট এর প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে আপনার পাসপোর্ট থাকলে খুব ভালো আর না থাকলে আপনাকে আপনার পাসপোর্ট আগে করতে হবে। পাসপোর্ট ছাড়া আপনি স্কলারশিপ এর জন্য আবেদন করতে পারবেন না। পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে হলে আপনাকে আপনার নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে। সেখানে আপনি দুটি উপায়ে আপনার পাসপোর্ট পেতে পারেন।

এক্সপ্রেস পদ্ধতিঃ এক্সপ্রেস পদ্ধতি হলো জরুরী ভিত্তিতে আপনি আপনার পাসপোর্ট পেতে পারেন। এতে সময় লাগবে সাত দিনের মত। এই পদ্ধতিতে আপনি আপনার পাসপোর্ট নিতে চাইলে আপনার খরচ হবে প্রায় ৭২০০ টাকা।

নরমাল পদ্ধতিঃ এই নরমাল পদ্ধতিতে আপনার পাসপোর্ট পেতে সময় লাগবে ২১ দিনের মত। আপনার পাসপোর্ট নিতে যথেষ্ট সময় থাকলে আপনি নরমাল পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন। নরমাল পদ্ধতিতে আপনার ৩৫০০ টাকার মত প্রয়োজন হয়।

অনেকে আবার বলবেন যে পাসপোর্ট কিভাবে পাবো? তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, আপনি আপনার নিকটস্থ অনলাইন এর দোকানে বা পাসপোর্ট অফিসে অথবা অনলাইন এর পাসপোর্ট এর আবেদন কপিটি পেয়ে যাবেন। তারপর সেই পাসপোর্ট এর আবেদন কপিটি পুরণ করতে হবে। তার পর আপনাকে ব্যাংক এর মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করতে হবে আর ব্যাংক স্লিপ সংগ্রহ করতে হবে।

এর পর আপনি পাসপোর্ট এর আবেদন কপি ও ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করার স্লিপ নিয়ে চলে যাবেন পাসপোর্ট অফিসে। সেখানে গেলে আপনি আপনার কাগজ পত্র জমা দিবেন আর তার পর আপনাকে আপনার পাসপোর্ট দিয়ে দিবে। কিন্তু এতে সময় এর পরিমান নির্ভর করবে আপনি কোন পদ্ধতিতে পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করেছেন।

যখন এই পাচটি ডকুমেন্ট আপনার কাছে থাকবে তখন আপনি স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

৬। Admission Letter

আপনি যে ভার্সিটিতে পড়বেন সেই ভার্সিটির ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। আপনার আবেদম প্রক্রিয়া শেষ হলে ভার্সিটি থেকে একটি এ্যাডমিশন লেটার আপনাকে আপনার পোস্ট অফিসের মাধ্যমে প্রেরণ করা হবে। যেখানে আপনার কোর্স সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় যেমন ডিগ্রি, বিষয়, কোর্সের সময়কাল উল্লেখ থাকবে। যেগুলো আপনাকে আবেদনের সময় ঠিক করে দিতে হবে।

৭। JW Paper

অনেকে বলেবন যে এই JW paper টা আবার কি? আপনাকে এ্যাডমিশন পেপারের সাথে এই যে ডাব্লিউ পেপার প্রেরণ করবে। এটি সেই পেপার যখন আপনি অন্য দেশে গিয়ে অর্থাৎ যে দেশে উচ্চশিক্ষা এর জন্য পড়বেন সেই দেশের ভিসার জন্য আবেদন করবেন তখন এই পেপার এর প্রয়োজন পড়বে। যদিও আপনার ভিসার সকল কার্যক্রম অ্যাাম্বাসি করে দিবে তখন এই পেপারটি নিয়ে আপনাকে সেই অ্যাম্বাসির কাছে জমা দিতে হবে। এই পেপারে আপনার নাম ভার্সিটির নাম বিষয় উল্লেখ থাকব। আশা করি যে ডাব্লিউ পেপার কি তা বুঝেছেন।

৮। Bank Statement

আবেদন করার পর দেশ থেকে যাওয়ার জন্য আপনাকে ভিসা পেতে হলে অ্যাাম্বাসিতে আপনাকে ব্যাংক স্টেট্মেন্ট দেখাতে হবে। স্টেট্মেন্ট এর সাথে আপনার আরো দরকার হতে পারে ব্যাংক সল্ভেন্সি। তাই ব্যাংক স্টেট্মেন্ট নেয়ার সময় ব্যাংক সল্ভেন্সি ও নিয়ে রাখবেন। এর ফলে পরে এই কাগজ দরকার হলে আর ঝামেলা পোহাতে হবে না।

৯। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স

অনেক ক্ষেত্রে আপনার পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দরকার পরতে পারে। তবে সব  ক্ষেত্রে এই পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দরকার হয় না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর দরকার পরে। যদি আপনার প্রয়োজন হয় তাহলে আপনাকে থানায় গিয়ে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এর জন্য আবেদন করতে হবে। যেখানে আপনার পুলিশ ভেরিফিকেশন নিয়ে সব মিলিয়ে ১৫দিনের মত সময় লাগতে পারে।

থানা থেকে আবেদন প্রক্রিয়া শেষ করার পর আপনাকে একটি ফর্ম দিবে যেটি নিয়ে আপনাকে ব্যাংকে যেতে হবে। আর সেখানে গিয়ে আপনাকে ৫০০ টাকা ফি পরিশোধ করতে হবে। তার পর আপনার পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের যাবতীয় কার্যক্রম শুরু হবে।

১০। মেডিকেল রিপোর্ট

বিভিন্ন দেশ এর জন্য মেডিকেল টেস্ট বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। যে দেশে যাবেন সেই দেশে যে রিপোর্ট চাইবে হাসপাতাল এ গিয়ে সেই টেস্ট করে তার রিপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে। আর যদি আগে থেকেই জানেন তাহলে তো আরো ভালোই সুবিধা হল টেস্ট করতে। তবে সব হাসপাতাল এই সব টেস্ট করায় না।

এক্ষেত্রে আপন্নাকে খোজ নিতে হবে আপনি যে দেশে যেতে চান সেই দেশের টেস্ট কোন হাস পাতাল করে। সেখানে গিয়ে আপনাকে টেস্ট করাতে হবে। এই টেস্ট এ ব্যয় কৃত সকল টাকা আপনাকে পরিশোধ করতে হবে। এখানে টাকার পরিমান নির্ভর করে আপনি কি ধরনের টেস্ট করাবেন। মেডিকেল রিপোর্ট আপনাকে ১ থেকে ২ দিনের মধ্যে দিয়ে দিবে।

১১। জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম সনদ

আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম সনদ দরকার হবে। যদি আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকে সে ক্ষেত্রে আপনার জন্ম সনদ দিয়েও কাজ হবে। আপনাকে আপনার সমস্ত ডকুমেন্ট এর মূল কপি সাথে রাখতে হবে। এর পাশাপাশি আপনি সমস্ত ডকুমেন্টের ফটোকপি সাথে রাখবেন। বলা যায় না কখন কি চেয়ে বসে তাই আপনাকে সব কিছুর জন্য একদম প্রস্তুত থাকতে হবে।

১২। ভিসার জন্য আবেদন

অ্যাাম্বাসিতে যাওয়ার জন্য আপনাকে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনাকে ভিসার ফর্ম পূরণ করতে হবে। ভিসার ফর্মের সাথে পূর্বে আলোচিত সকল কাগজ পত্র রাখবেন। সব গুলো ডকুমেন্টের কমপক্ষে একটি করে ফটোকপি রাখবেন। যেগুলো আপনার অ্যাাম্বাসিতে প্রয়োজন হবে। এর সাথে আপনাকে পাসপোর্ট সাইজের ছবি ও অ্যাম্বাসি সাইজের ছবি রাখতে হবে। দেশ ভিত্তিক ভিসার জন্য ফি ও ভিন্ন হয়ে থাকে।

এখানেও আপনি পাসপোর্টের মত সাধারন ও জরুরী ভিত্তিতে আবেদন করতে হবে। জরুরী ভিত্তিকে করলে তুলনামুলকভাবে সময় কম লাগবে। তার পর কিছু দিনের মধ্যে আপনি ভিসা পেয়ে যাবেন। আর অনেক ক্ষেত্রে আপনার বিমানের টিকেটের প্রয়োজন হতে পারে। টিকেট বুকিং দিতে খরচের প্রয়োজন হয় না। তাই এত কিছু যখন করেছেন এটিও সাথে করে রাখবেন।

এইসব প্রস্তুতি গ্রহন করেথাকলে আপনার বিদেশে গিয়ে পড়াশুনা করতে কোন সমস্যা হবে না। আপনি আপনার কাংক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা লাভ করতে পারবেন। আপনারা আরও পড়তে পারেন বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যে সব তথ্য জানা প্রয়োজন। শুভ কামনা।