আইইএলটিএস (IELTS) কি । কেন করবেন, যোগ্যতা বিস্তারিত তথ্য

0
228
আইইএলটিএস (IELTS) স্কোর কি । কি যোগ্যতা লাগে কেন করবেন ও কি কাজে লাগে
IELTS কি? IELTS সম্পর্কে বিস্তারিত সব তথ্য

আসসালামু আলাইকুম পাঠকবৃন্দ। আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে আপনারা সবাই ভালই আছেন। আজকের আলোচনার বিষয় হলো আইইএলটিএস (IELTS) কি ? আইইএলটিএস (IELTS) করতে কি যোগ্যতা লাগে? আইইএলটিএস (IELTS) কেন করবেন এবং আইইএলটিএস (IELTS) কি কাজে লাগে ? আইইএলটিএস (IELTS) স্কোর ইত্যাদি। তাহলে আর অপেক্ষা না করে চলুন শুরু করা যাকঃ-

আইইএলটিএস (IELTS) কি

আইইএলটিএস (IELTS) কি – আইইএলটিএস (IELTS) এর পূর্ণ রুপ হল, International English Language Testing System। এটি আন্তর্জাতিক সীকৃত ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার সনদ। এই আইইএলটিএস (IELTS) Test এর মাধ্যমে শুধু ইংরেজিতে আপনার দক্ষতা কেমন সেটা যাচাই করা হয়। যাদের মাতৃভাষা ইংরেজি না তাদের এই পরিক্ষা দিতে হয়।

ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং আইডিপি (IDP) এই দুটি প্রতিষ্ঠান আইইএলটিএস (IELTS) পরিক্ষা পরিচালনা করে থাকে। আইইএলটিএস (IELTS) পরিক্ষা দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি একাডেমিক আর একটি জেনারেল ট্রেনিং । যারা উচ্চ শিক্ষার জন্য বাইরে দেশে যেতে চান তাদের একাডেমিক পরিক্ষা দিতে হয়। আর যারা ইমিগ্রেশন প্রত্যাশী তাদের জন্য মুলত এই জেনারেল ট্রেনিং পদ্ধতি।

আইইএলটিএস (IELTS) করতে কি যোগ্যতা লাগে

আইইএলটিএস (IELTS) মূলত ইংরেজি ভাষার দক্ষতার সনদ। আপনি যদি উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যেতে চান তাহলে আইইএলটিএস (IELTS) দিয়ে আপনার যোগ্যতা প্রমান করতে হবে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় আইইএলটিএস (IELTS) স্কোর বিভিন্ন রকম চেয়ে থাকে। আইইএলটিএস (IELTS) দিতে তেমন যোগ্যতার দরকার হয় না। আপনি যদি বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে চান তাহলে আপনার পূর্বের শিক্ষাগত যোগ্যতা সার্টিফিকেট, নম্বর পত্র ইত্যাদি লাগতে পারে। তাইও এগুলো সাথে নেয়া ভাল। আইইএলটিএস (IELTS) করতে কি যোগ্যতা লাগে তা নির্ভর করে মূলত আপনার উচ্চশিক্ষার জন্য যে বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করেছেন তার উপার। নির্বাচনকৃত বিশ্ববিদ্যালয় যে মন যোগ্যতা উল্লেখ করবে তেমন আইইএলটিএস (IELTS) স্কোর যোগ্যতা নিতে হবে।

আইইএলটিএস (IELTS) কেন করবেন ও কি কাজে লাগে

আমরা যারা বিদেশে পড়াশোনা করার জন্য যেতে চাই তাদের জন্য আইইএলটিএস (IELTS) করতে হবে। কেননা বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষা প্রদানের জন্য আইইএলটিএস (IELTS) স্কোর দাবি করে থাকে। আপনাকে আইইএলটিএস (IELTS) এর মাধ্যমে নিজেকে প্রমান করতে আইইএলটিএস (IELTS) করতে হবে।

অনেক কাজে লাগে আইইএলটিএস (IELTS)। যেমন ধরেন,  ইমিগ্রেশন/ চাকুরি/ব্যবসা ইত্যাদির উদ্দেশ্যে আইইএলটিএস (IELTS) অনেক কাজে লাগে। বিদেশে ভাল চাকরির ক্ষেত্রে অথবা প্রোমোশনের ক্ষেত্রে আইইএলটিএস (IELTS) অনেক কাজে আসে। আপনি এই আইইএলটিএস (IELTS) এর মাধ্যমে নিজেকে অন্যদের তুলনায় অনেক এগিয়ে রাখতে পারবেন।

আইইএলটিএস (IELTS) পরিক্ষার ধাপ কয়টি

আমরা আইইএলটিএস (IELTS) কি তা জানলাম ও আইইএলটিএস (IELTS) কেন করবেন ও কি কাজে লাগে তা আগেই জেনেছি। এবার জানবো আইইএলটিএস (IELTS) পরীক্ষা কিভাবে হয়। আইইএলটিএস (IELTS) পরীক্ষার ধাপ ৪ টি। যথা-

১। আইইএলটিএস লিসেনিং(IELTS Listening),

২। আইইএলটিএস রিডিং(IELTS Reading),

৩। আইইএলটিএস রাইটিং(IELTS Writing),

৪। আইইএলটিএস স্পিকিং(IELTS Speaking)

আইইএলটিএস লিসেনিং (IELTS Listening)

IELTS আইইএলটিএস লিসেনিং ধাপে ৪টা পার্টে ৪০ টা প্রশ্ন থাকে। এই প্রশ্নের জন্য আপনি সময় পাবেন ৩০ মিনিট। এই ধাপে আপনার শ্রবনের ক্ষমতা নির্ধারন করার জন্য পরিক্ষা নেয়। আপনাকে একটা হেডফোন দিয়ে তারা কিছু রেকর্ডিং শোনাবে। আর সেখান থেকে আপনাকে কিছু  MCQ দেয়া হবে সেগুলোর সঠিক উত্তর দিতে হবে। যেহেতু এই ধাপে ৪টা পার্ট আছে। প্রত্যেক পার্টে আপনাকে ১০ করে মোট ৪০ নম্বরের উত্তর করতে হবে। তবে আপনাকে শোনার জন্য শুধু একবারই রেকর্ডিং বাজানো হবে।

আইইএলটিএস রিডিং (IELTS Reading)

রিডিং ধাপে আপনাকে ৩টি প্যাসেজ দেয়া থাকবে। সেই প্যাসেজ গুলো পড়ে আপনাকে ৪০ টি প্রশ্নের উত্তর খুজে বের করতে হবে। আইইএলটিএস রিডিং ধাপেও আপনাকে সময় দেয়া হবে মাত্র ৪০ মিনিট। এক্ষেত্রে সময়ের মধ্যে আপনাকে উত্তর করতে হলে আগে প্রশ্নগুলো পড়ে নিতে হবে। তার পর আপনাকে প্যাসেজ পড়তে হবে। এই পদ্ধতি অনুসরন করলে সময়ের মধ্যে সব প্রশ্ন শেষ করতে পারবেন। রিডিং এ আপনি যত মার্ক তুলতে পারবেন আইইএলটিএস রিডিং এ আপনার মোটামুটি ততই রেজাল্ট আসবে। তাই আইইএলটিএস রিডিং অনেক গুরুত্বসহকারে পরিক্ষা দিতে হবে।

আইইএলটিএস রাইটিং (IELTS Writing)

রাইটিং ধাপে আপনাকে একটি গ্রাফ বা চার্ট দেয়া হবে প্রশ্ন সরূপ। আইইএলটিএস রাইটিং ধাপেএই চার্ট এ বিভিন্ন ধরনের দ্রব্য বা যেকোন কিছুর উন্নতি বা অবনতি উল্লেখ থাকবে। এই চার্ট থেকে আপনাকে নিজের ভাষায় সব তথ্য বর্ননা করতে হবে। চার্ট আপনাকে কমপক্ষে ১৫০ শব্দের মত একটি বর্ণনা লিখতে হবে। লেখার ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই ভাষাশৈলীর প্রমান দিতে হবে। যেহেতু আপনাকে প্যাসেজ লিখতে হবে কোন কিছুর উপরে সেক্ষেত্রে আপনাকে শব্দ ভান্ডার বেশি ও বাক্য গঠনে ভালো ভাবে দক্ষ হতে হবে। আইইএলটিএস রাইটিং ধাপে আপনাকে ভাল করতে হলে শব্দ ভান্ডার ভাল জানতে হবে।

আইইএলটিএস স্পিকিং(IELTS Speaking)

স্পিকিং ধাপ টা একসাথে হয় না। কমপক্ষে দুই তিন দিন পর আপনাকে এই আইইএলটিএস স্পিকিং ধাপে পরিক্ষা দিতে হবে। আগে আপনার আইইএলটিএস রিডিং, আইইএলটিএস রাইটিং, আইইএলটিএস লিসেনিং হয়ে যাবে আর পরবর্তি আপনাকে জানানো হবে আইইএলটিএস স্পিকিং এর সময় তারিখ। আইইএলটিএস স্পিকিং ধাপে  আপনার কথা বলার ধরন কিভাবে বলছেন কি বাক্য দিয়ে কথা বলছেন সেটা লক্ষ করে মার্ক দেয়া হয়। আইইএলটিএস স্পিকিং এ ভালো মার্ক পেতে হলে আপনাকে বুলেটের গতিতে কথা বলতে হবে।  আইইএলটিএস (IELTS) স্পিকিং এ তিনটি বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।

প্রথমত আপনার পরিচয় কি ,পরিবার বন্ধু নিয়ে প্রশ্ন করা হবে আইইএলটিএস স্পিকিং এ। আপনাকে সেগুলোর উত্তর খুব ভাল ভাবে দিতে হবে। দ্বিতীয়ত হলো যিনি ইন্সট্রাক্টর বা পর্যবেক্ষক থাকবেন তিনি আপনাকে কিছু কার্ড দিবেন। সেগুলায় বিভিন্ন টপিক থাকবে। তার মধ্যে থেকে আপনাকে একটা বিষয় নিয়ে দুই তিন মিনিট কথা বলতে হবে। আর শেষের দিকে আপনাকে পর্যবেক্ষকের সাথে কোন একটি বিষয় নিয়ে কথপোকথন করতে হবে। আইইএলটিএস স্পিকিং এ ভালো মার্ক পেতে হবে যে বিষয়ে কথা বলবেন সেই বিষয়ে সর্বোচ্চ তথ্য দিয়ে কথা বলতে হবে। কথা বলতে আমতা আমতা করা যাবে না এতে পরিক্ষক খুশি হবে না আর মার্ক ও কম দিবেন। তবে আপনি যদি খুব সুন্দর করে গুছিয়ে সেই বিষয়ের কিছু তথ্য তুলে ধরে একটু ভিন্ন ভাবে পরিক্ষকের সামনে তুলে ধরতে পারেন তাহলে আপনি ভাল একটা মার্ক পাবেন।

আইইএলটিএস স্কোর

বর্তমানে আইইএলটিএস এর স্কোর সাধারনত ৪ টি ধাপের গড় করে দেওয়া হয়। মোট আইইএলটিএস (IELTS) স্কোর থাকে ৯। উচ্চশিক্ষার জন্যে যেকোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইইএলটিএস (IELTS) স্কোর ৭-৭.৫ চাওয়া হয়। তবে ৬.৫ আইইএলটিএস (IELTS) স্কোর এর নিচে কখনো নেওয়া হয়না। আইইএলটিএস (IELTS) পরিক্ষা নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্যেকটি ধাপে ৭+ মার্ক চাওয়া হয়। এই জন্য আইইএলটিএস (IELTS) পরিক্ষায় ভালো করতে হলে আপনাকে খুব ভালো ভাবে প্রাকটিস করতে হবে সব বিষয়ে।

আইইএলটিএস (IELTS) প্রস্তুতি

আইইএলটিএস (IELTS) কি তা জানলাম। এখন আইইএলটিএস (IELTS) কিভাবে নেব। আইইএলটিএস (IELTS) পরীক্ষায় ভাল করার উপায় কি তা নিয়ে আলোচনা করবো।

আপনি আইইএলটিএস (IELTS) পরিক্ষায় ভালো করতে হলে আপনাকে প্রথমে আপনার লক্ষ্য ঠিক করে নিতে হবে। আপনি কোন বিশ্ব বিদ্যালয়ে পড়তে চান সে বিশ্ববিদ্যালয়ে আইইএলটিএস (IELTS) এর রেজাল্ট কত চায় সেটা সম্পর্কে আপনাকে অবগত থাকতে হবে। আইইএলটিএস (IELTS) এ রিডিং রাইটিং লিসেনিং স্পিকিং এ ভালো করতে হলে আপনাকে ইংরেজী জার্নাল, পেপার, বই পড়তে হবে, নিউজ দেখতে হবে। এছাড়া স্পিকিং এর জন্যে নিজে নিজে বা বন্ধু বা পরিবারের সাথে ইংরেজিতে যেকোনো ধরনের আলাপ আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। এর ফলে আপনার ইংরেজিতে কথা বলতে যে জড়তা টা আসত সেটা কেটে যাবে। যখন আপনি ইংরেজিতে অনড়গল কথা বলতে পারবেন তখন আপনার আত্ববিশ্বাস বেড়ে যাবে।

এছাড়া ব্রিটিশ কাউন্সিলের লাইব্রেরিতে সদস্য হলে বিভিন্ন রকমের বই ব্যবহার করা যাবে। এই সব বই পড়ে আইইএলটিএস (IELTS) এর জন্য পরিক্ষা দিলে স্কোর ভালো আসার সম্ভবনা থাকে।

আইইএলটিএস (IELTS) পরিক্ষা কখন ও কোথায় হয়

পরিক্ষা সম্পন্ন করতে পরিক্ষার্থীর দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগবে। প্রতিমাসে আইইএলটিএস (IELTS) ৩ বার পরিক্ষা হয়ে থাকে ব্রিটিশ কাউন্সিল ও আইডিপির যৌথ উদ্দ্যেগে। ওয়েব সাইটে একটা নাম্বার দেয়া থাকে সেখানে কল দিয়ে আইইএলটিএস (IELTS) পরিক্ষার সময় জেনে নেয়া যায়। আইইএলটিএস (IELTS) এর স্কোরের মেয়াদ থাকে দুই বছর। বাড়িতে বসে থেকেই কিছু স্টেপ ফলো করে আপনি নিজেই আইইএলটিএস (IELTS) এর ফর্ম পুরণ করতে পারবেন। এসএম এস এর মাধ্যমে আইইএলটিএস (IELTS) নিবন্ধন নম্বর, স্থান, সময় আপনাকে জানিয়ে দেয়া হবে। বাংলাদেশে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের পরিক্ষা কেন্দ্রে এই আইইএলটিএস (IELTS) পরিক্ষা নেয়া হয়।

পাঠক বৃন্দরা কেমন লাগলো আজকের বিষয় আইইএলটিএস (IELTS) কি ? আইইএলটিএস (IELTS) করতে কি যোগ্যতা লাগে? আইইএলটিএস (IELTS) কেন করবেন এবং আইইএলটিএস (IELTS) এর কাজ কি ? তা কমেন্ট করে জানাবেন। আর কোন বিষয় আপনার বুঝতে অসুবিধা হয়েছে তা জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।

আপনি আরো পড়তে পারবেন NET EXAM সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। ধন্যবাদ আবার আসবেন।